এই তরুণীর স্বামী খুবই ভালো ছিলেন। কিন্তু সমস্যা ছিল এই এক জায়গায়। কেন সেরকম হল? সেই প্রশ্নের উত্তরে তরুণীর স্বামী যা বললেন, পায়ের তলায় মাটি সরে যায় তাঁর। জেনে নিন সেই ঘটনাটি
ছোট থেকে আমায় বিয়ের বিষয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছিল। আমায় বলা হয় যে, বিয়ে খুব সুন্দর একটি বন্ধন। এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। এর মতো পবিত্র বন্ধন হয়তো আর নেই। আমার বাবা-মায়ের মধ্য়ে সারাজীবন ঝগড়া হতে দেখেছি।
দাদা, দিদিদের সংসারেও নিত্য অশান্তি লেগেই থাকে। এর থেকে আমারও মনে হতে শুরু করে যে, সংসারে শান্তি বজায় রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেখানে যদি আমার নিজের খুশির সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়, তাহলে তাই করব।
এই ধারণা নিয়েই আমি বড় হয়েছি। তাই যখনই কোনও কঠিন পরিস্থিতি এসেছে, আত্মত্যাগকেই সঠিক রাস্তা মনে হয়েছে। একদিন আমার বিয়ে হয়। এরপর থেকেই আমার জীবনে শুরু হয় এক কঠিন সময়ে। আমার মতো আর কোনও মেয়ে যাতে এই একই ভুল না করে, তাই আজ নিজের কথা শেয়ার করলাম। হয়তো অনেকেই সাহায্য পাবেন।
খুব ভেঙে পড়ি বিয়ের পরে
ধুমধাম করে বিয়ে হয়। আমার সব কিছু রূপকথার মতো মনে হতে শুরু করে। কিন্তু বউভাতের রাতে আমার টনক নড়ে। আমি সেই রাত নিয়ে অনেক কিছুই আশা করেছিলাম। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুতও করেছিলাম। যাতে প্রত্যেকটা মুহূর্ত আরও সুন্দর করে তুলতে পারি। কিন্তু সেখানেই আমি প্রথম প্রত্যাখ্যান পাই।
আমার স্বামী পাশে এসে বসে। কয়েকটা মিনিটের জন্যে একটা-দুটো কথা বলে। শেষে বলে, সে ভীষণ ক্লান্ত এবং তারপরেই ঘুমিয়ে পড়ে। আমারও মনে হয়েছিল, হয়তো সে সত্য়িই ক্লান্ত। আমি আর ভাবনিনি। সেই সময়ে আর কথাও বাড়াতে চাইনি। যদি ওর আমায় নিয়ে মনে অন্যরকম ধারণা হয়? এই ভয়ও কাজ করেছিল।
কেন এমন হল জানি না
এরপর এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়। ও আমাকে একবারের জন্যেও কাছে ডাকেনি। ছোঁয়নি পর্যন্ত। আমার খুব অদ্ভুত লাগছিল। আমিও কোনও কথা বলিনি। আমি এমনিই খুব লাজুক। কিন্তু ও আমার সঙ্গে এমনি অনেক কথা বলত। অনেক আড্ডাও হত। আমার যত্নও নিত। শুধু শারীরিক আকর্ষণ দেখিনি কোনও। স্বামীর মতো না হলেও ও আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। মাসের পর মাস পেরিয়ে যায়।
কিন্তু নব বিবাহিত দম্পতির মতো কোনও বিষয়ই হয়তো আমাদের মধ্য়ে ছিল না। আমিও কোনও অভিযোগ করিনি। কারণ খুব ভালো মানুষ ও। নিজের পরিবারের কথাও যথেষ্ট ভাবে। শুধু সেই কমতিটুকুই সব সময় ছিল। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না।
সব শুনে পায়ের তলার মাটি সরে গেল
বিয়ের এক বছর পার হয়ে যায়। ওর সঙ্গে আমার একটি বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। পরে সেটাই বড় আকার নেয়। সেই সময়ে আমিও খুব রেগে ছিলাম। হঠাৎ আমি আমার মনের কথা বলে ফেলি। আমি ওকে বলি যে, ওর ভালোবাসার জন্যে সব সময় অপেক্ষা করেছিলাম আমি।
কিন্তু কখনও বলিনি। পাইনি। আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম সেই সময়ে। ঠিক করে কথাও বলতে পারছিলাম না। আমি কথাগুলো বলার পরেই স্বামীও চুপ করে যায়। কাঁদতে শুরু করে। কখনও ভাবিনি যে, ও আমার সামনে এরকমভাবে ভেঙে পড়বে। আমি ওকে সামলাতে যাচ্ছিলাম। সেই সময়ে ও বলে, “আমি দুঃখিত, আমি কখনও তোমায় আঘাত করতে চাইনি। আমি মহিলাদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি না।”
আমার পায়ের তলা থেকে যেন মাটিতে সরে যায়। সেই একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়েছিলাম আমি। কাঁপছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি ওকে বলি, “তুমি কী বলতে চাইছ? তুমি কি সমপ্রেমী?” সে আমার দিকে একবার তাকায়। কিন্তু কিছুই বলে না। আমি এই বিষয়ে ভাবতে পারছিলাম না যে, আমাদের বিয়েটার কোনও অর্থ নেই। আমার স্বামী কোনওদিন আমাকে ভালোবাসবে না। আমি বিছানার এক কোণায় চুপ করে বসেছিলাম। কম্বলটা গায়ে তুলে নিলাম। সেই সময়ে ঘুমিয়ে পড়তে চাইছিলাম। কারণ, এই বাস্তব থেকে আমায় পালাতেই হত।
জানি কিছুই বদলাবে না
পরের দিন সকালে কিছুই বদলায়নি। জানতাম, এটা কোনও স্বপ্ন নয়। আমার স্বামী ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। এটা আমি মেনে নিই। কিন্তু আমার খুশির কথা কি কেউ ভাববে না? আমায় কি সারাজীবন এই মিথ্য়ে সম্পর্কটাকেই বয়ে বেড়াতে হবে? সে আমার কাছে ক্ষমা চায়। আমায় জানায় যে, ওর আমাকে বিয়ের আগেই এই কথা জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। আসলে ও ভেবেছিল যে, বিয়ের পর ও বদলে যেতে পারে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কীভাবে?
আমরা একে অপরের পাশে আছি
এক মাস পার হয়েছে, আমি এবং সে ডিভোর্স ফাইল করেছি। অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। আমাদের পরিবার এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আমার এবং স্বামীর মধ্য়ে বন্ধন আরও মজবুত হয়েছে। আমরা একে অপরের আরও ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছি। একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি।
আমি ওকে সাপোর্ট করেছি। আমি চেয়েছি যে, ও মনের মানুষকে খুঁজে পাক। একইভাবে সেও আমায় সাপোর্ট করেছে। সে চেয়েছে যে, আমিও যেন সুন্দর ভাবে জীবনটা কাটাতে পারি। জীবনে মনের মানুষ খুঁজে পাই। যার সঙ্গে আজীবন ভালোভাবে থাকতে পারি। এটাই আমাদের গল্প। আমরা এভাবেই খুশি।
তথ্যসূত্রঃ এই সময়
প্রবন্ধে ব্যবহৃত সব ছবি প্রতীকী, সৌজন্য – istock
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।